দিলদার টেলিসামাদের অভাব পূরণ করবে কারা?

চলচ্চিত্রে একজন কৌতুক অভিনয়শিল্পীর ভূমিকা কিন্তু নায়ক বা ভিলেনের চেয়ে কম নয়। কারণ, তারা যতক্ষণ পর্দায় থাকেন দর্শককে মাতিয়ে রাখেন নানা হাস্যরসে। একটু পেছনে তাকালে দেখা যায় সিনেমার একটি বড় অংশজুড়ে থাকত কৌতুকপর্ব। তবে বর্তমানে তা হারিয়েছে, সিনেমায় নতুন নতুন নানা বিষয় যুক্ত হলেও কৌতুকের অভাবটা রয়েই গেছে।

যেখানে আগে সিনেমার গল্প লেখার সময়ও কৌতুককে গুরুত্ব দিয়ে লেখা হতো, এমনও হতো যে সিনেমার নায়কের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত কৌতুক অভিনেতা যেন সেই সহনায়ক, আর তার সাথে সহনায়িকাও দেখা যেত সিনেমায়। তবে আজ এসব নিছক অতীত বটে। সিনেমায় কৌতুক অভিনেতাদের উপস্থিতিই চোখে পড়ে না সেভাবে।

বাংলা সিনেমায় শুরু থেকে যাদের অভিনয়ে সবাই হাস্যরসে মেতে উঠত তারা আজ নেই। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের প্রথম দিকের সফল কৌতুক অভিনেতা ছিলেন খান জয়নুল ও রবিউল। সে সময়ের শতাধিক সিনেমায় তাদের প্রতিভার ঝলক দেখতে পাওয়া যায় আজও। পরে দিলদার, আনিস, টেলি সামাদের মতো গুণী শিল্পীরা নিয়মিত কৌতুক অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন সিনেমায়। তাদের হারানোর বেশ কয়েক বছর তাদের উত্তরসূরিদেরও নিয়মিত দেখা যায় না এখনকার সিনেমায়। আশি ও নব্বইয়ের দশকের বাংলা সিনেমায় কৌতুক অভিনেতা মানেই ছিলেন দিলদার। এক কথায় বলাই যায়, অঘোষিতভাবে তিনি বাংলা কমেডির রাজপুত্র বনে গিয়েছিলেন।

কৌতুক অভিনেতা হিসেবে দিলদার জনপ্রিয়তার এমন উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিলেন যে, তাকে নায়ক করে ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি সিনেমাও নির্মাণ করা হয়। ওই সিনেমায় একজন লোক হাসানো মানুষের খোলস ছেড়ে তিনি হাজির হয়েছিলেন অন্যরূপে। সিনেমায় দর্শক তার অভিনয় দেখে যেমন মুগ্ধ হয়েছেন, তেমনি চরিত্রের বৈচিত্র্যও দেখিয়েছেন অভিনেতা দিলদার। কিন্তু এই অভিনেতার মৃত্যুর পর যে শূন্যতা দেখা দিয়েছিল, তা আজও পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি। উল্টো বাংলা সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ এই অংশটিই এখন বিলুপ্তির পথে।

কৌতুক অভিনেতা না হয়েও এমন অনেক তারকা ছিলেন যারা নিয়মিত অন্যান্য চরিত্রের পাশাপাশি কাজ করেছেন কৌতুক অভিনেতা হিসেবেও। তাদের মধ্যে যাদের নাম না নিলেই নয়, তারা হলেন এ টি এম শামসুজ্জামান ও হুমায়ুন ফরীদি। এই দুই কিংবদন্তি অভিনেতার থেকেও কিন্তু একটা বিষয় শেখার আছে, দেখতে যতই ছোট চরিত্র হোক, কৌতুক অভিনেতার কাজটি কিন্তু বেশ কঠিন।

এখন চলচ্চিত্র অঙ্গনে কৌতুকশিল্পীদের উপস্থিতি খুবই কম। এদিকে আফজাল শরীফ ও কাবিলার মতো শিল্পীদেরও বাংলা চলচ্চিত্রে দেখা গেছে বেশ কয়েক বছর আগে। নায়ক বা মূল চরিত্রের পাশে থেকে তারাও দর্শক হাসিয়েছেন।

কিন্তু বর্তমানের প্রেক্ষাপটে তেমন কোনো নাম নেই এ তালিকায় রাখার মতো। তার মানে এই নয় যে কৌতুক অভিনেতা নেই। মাঝে মাঝে দু-একজনকে দেখা যায় নাটক, সিনেমা বা সিরিজে হাস্যরসে মাত করেন দর্শককে। এই ধরুন ‘মহানগর’ সিরিজের কথাই যদি বলি, সেখানে নাসির উদ্দিন খান নজরে এসেছেন সবার। যতক্ষণ তিনি স্ক্রিনে ছিলেন সবাই এক মুহূর্তের জন্য হাসি ধামাতে পারেননি। এ ছাড়াও সিদ্দিক, পলাশের মতো দুর্দান্ত অভিনেতারাও এগিয়ে আছেন কৌতুকে। তবে কেন তাদের নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবছেন না পরিচালকেরা বা তাদের কেন আরও বেশি ব্যবহার করছেন না কৌতুক অভিনেতা হিসেবে, সেটিই এখন ভাববার বিষয়। বাংলা নাটক, সিনেমায় আরও বাড়বে কৌতুক অভিনয়। আসবেন দিলদার, টেলি সামাদের যোগ্য উত্তরসূরি–সেটাই তো চান সিনেমাপ্রেমীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *