পড়ালেখা বাদ দিয়ে মডেলিং করা পছন্দ ছিল না পরিবারের: মাহি
করোনার তাণ্ডব কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে সবাই ব্যস্ত বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ উদযাপনে। তবে তারকাদের জীবনে প্রায়ই বিভিন্ন উৎসব-আয়োজন ঘটা করে সবার সঙ্গে উদযাপন করা হয় না। এর ব্যতিক্রম হয়নি ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সামিরা খান মাহি’র। নববর্ষের প্রথম দিন রাজধানী ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নাটকের শুটিংয়ে ব্যস্ত তিনি। শুটিংয়ের ব্যস্ত সময়ের ফাঁকেই নিজের বৈশাখ, ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলেন তার সঙ্গে।
নববর্ষের দিন কাজ করছেন…
নববর্ষের প্রথম দিন নাটকের শুটিংয়ে কাটালাম। এর আগে গত দুই বছর তো করোনাভাইরাসের কারণে কখনো বাইরেই বের হওয়া হয়নি। তবে এবার সেভাবে কোনো পরিকল্পনাও ছিল না। একদিক থেকে রমজান মাস, আবার আসন্ন ঈদের নাটকের শুটিং নিয়ে ব্যস্ততা। আর এই ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই কাটছে বাংলা নববর্ষ।
ছোট বেলার ও এই সময়ের বৈশাখ উদযাপন সম্পর্কে জানতে চাই…
ঢাকায় আসার পর কখনো সেভাবে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়নি। আগে র্যাম্প মডেলিং, ফ্যাশন শো করতাম। সেই সময় প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে ফ্যাশন শো থাকতো, তাতে পারফর্ম করে ব্যস্ত সময় কাটতো। আর যখন সিলেটে পড়ালেখা করেছি তখন একবারই পহেলা বৈশাখ পালন করেছি। কেননা, আমার পরিবার খুবই নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে পরিচালনা হয়। একই সঙ্গে যেখানে থেকেছি সেই জায়গাটাও রেস্ট্রিকটেড ছিল। এ কারণে ঘটা করে কখনো বৈশাখ উদযাপন করা হয়নি।
বৈশাখ নিয়ে মজার কোনো ঘটনা আছে?
সম্ভবত ২০১১ বা ২০১২ সাল। সেই সময়ই জীবনে প্রথমবারের মতো বৈশাখ উদযাপন করেছি। যেহেতু প্রথমবার তাই অনেক এক্সাইটেড ছিলাম। পহেলা বৈশাখ, পার্লারে গিয়ে মেকআপ করব না; তা কি কখনো হয়। পার্লারেও প্রথমবার যাওয়া। তো পার্লারে গিয়ে মেকআপ করে সেজে বাসায় ফিরেছি। গ্রামের দিকে পার্লার হওয়ায় বর্তমান সময়ের মতো আধুনিকতা ছিল না, মেকআপও এই সময়ের মতো ন্যাচরাল টুনের মতো ছিল না। যে কারণে সাজার পর আমাকে খুবই সাদা দেখাচ্ছিল। সেজে-গুজে বাসায় ঢোকার সময় আম্মু আমাকে বলতেছে- ‘মা, আমার মেয়ে কোথায়?’ তখন আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলি যে, আম্মু তুমি আমাকে চিনতেছো না! আম্মুর কথায় খুবই হেসেছিলাম, আবার অবাকও হয়েছিলাম।
তারকা হওয়ার আগে ও পরের উৎসবে কোনো পার্থক্য দেখেন?
আমি খুবই সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকায় কখনো কোনো জন্মদিন, পহেলা বৈশাখ বা ঈদ অনুষ্ঠান পরিবারের বাইরে উদযাপন করা হয়নি। এখনো যেকোনো উৎসবে বাইরে যাওয়া হয় না। সব সময় বাসাতেই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাই। বাইরে বের হওয়া খুব একটা পছন্দ নয় আমার। শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ খুবই ভালো লাগে আমার। আর এখন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের জন্য কখনো কখনো শুটিংয়ের মধ্যেই উৎসব কেটে যায়।
অভিনয়ে পরিবারের সমর্থন কেমন ছিল?
শুরুর দিকে পরিবার থেকে সেভাবে সমর্থন ছিল না। তাদের বুঝাতে সময় লেগেছে অনেক। আমি তো গ্রাজুয়েশন শেষ না করেই মডেলিং শুরু করেছি। পড়ালেখা বাদ দিয়ে মডেলিং করা কখনো পছন্দের ছিল না পরিবারের। কিন্তু ধীরে ধীরে আব্বু-আম্মু যখন দেখলো ভালো করছি, তখন তারা অনেক সহযোগিতা করেছে। এখন পর্যন্ত তাদের সহযোগিতা পাচ্ছি। রমজান মাস ছাড়া আম্মু সকালে উঠে নাস্তা তৈরি করে দেয়। বোন শুটিংয়ে বের হওয়ার সময় লাগেজ থেকে শুরু করে সব গুছিয়ে দেয়। পরিবারের সবার সাহায্য-সহযোগিতা নিয়েই এতদূর আসা।
প্রায় তিন বছর আগে একসেন্টের সঙ্গে একই স্টেজে পারফর্ম করেছেন…
রোমানিয়ান গায়ক একসেন্টের মতো আন্তর্জাতিক মানের একজন তারকার সঙ্গে একই স্টেজে পারফর্ম করা আমার জন্য অনেক ভাগ্যের ব্যাপার ছিল। সেটা অন্যরকম এক অনুভূতি। তিনি খুবই ফ্রেন্ডলি। তার সঙ্গে স্টেজে হেঁটেছি, তার ইন্টারঅ্যাকশন সবই ভালো লাগার ছিল। আর প্রতিটি র্যাম্প মডেলের স্বপ্ন থাকে, আন্তর্জাতিক স্টেজে বা আন্তর্জাতিক মানের তারকার সঙ্গে পারফর্ম করা। সেদিকে থেকে আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাই…
আপাতত একটু বেশিই ব্যস্ত। সামনেই ঈদ। ঈদকে কেন্দ্র করে অনেক নাটকে কাজ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি ‘হাঙ্গর’ নাটকের শুটিং শেষ করেছি। ‘প্রেম এমনই’ ও ‘কুরুম্যান‘ নাটকেও কাজ করেছি। এ সব নাটক ঈদে প্রচার হবে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি নাটকে কাজ করছি। যা এবারের ঈদে বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারসহ ইউটিউবে রিলিজ হবে।
মিডিয়াতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
নিজেকে কোথায় দেখতে চাই সেটা বড় বিষয় নয়। আমি আসলে ভালো কাজ করতে চাই। দর্শকদের ভালো ভালো কাজ উপহার দিতে চাই। আমি নিজের জন্যই ভালো কাজ করতে চাই। একই ধাঁচের কাজ আমার কখনো পছন্দ না, তাই ভিন্ন ভিন্ন ধাঁচে নিজেকে ভেঙে অনেক কাজ করতে চাই। এক কথায় ব্যতিক্রমী চরিত্রে অনেক কাজ করার ইচ্ছা। তবে কখনো কারো মতো বা করো জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা নেই আমার। আমি নিজের ব্যতিক্রম কাজের মাধ্যমে নিজেকে ও নিজের অবস্থান গড়ে তুলতে চাই। যাতে মানুষ আমাকে কাজের মাধ্যমে চিনেন, জানেন।
বিয়ে নিয়ে চিন্তা করেছেন?
আমি তো মাত্র ক্যারিয়ার শুরু করলাম। এখনো বিয়ে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। কাজ করছি, করতে থাকি। আমার ইচ্ছা আছে আমি আত্মনির্ভরশীল হবো। সেটা ১৬ বছর থেকেই ইচ্ছা আমার। আগে নিজেকে ভালো একটা অবস্থানে নিয়ে যাই। নিজস্ব পরিচিত হোক। আমাদের দেশে তো কেবল শহরে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের নিজস্ব পরিচয় থাকে। কিন্তু এটা এখনো গ্রাম পর্যায়ে হয়ে উঠেনি। তবে আমি কখনো অন্যের পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না বলেই নিজস্ব পরিচিতি চাই।
প্রেম নিয়ে কী বলবেন?
আপাতত সিঙ্গেল আছি। এই অবস্থায় আমার পক্ষে রিলেশনে যাওয়াও খুব কঠিন কাজ। ভোরে শুটিংয়ের জন্য বের হয়ে সারাদিন শুটিং করে মাঝ রাতে বাসায় ফেরা হয় আমার। এই সময়ের মধ্যে একজন মানুষের জন্য অতিরিক্ত সময় বের করব কখন? তাকে কখন সময় দেব? এ অবস্থায় রিলেশনে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।