হাসির রাজার চলে যাওয়ার ১৯ বছর
হাসতে সবাই ভালোবাসলেও মানুষকে হাসানো সহজ কোনো কাজ নয়। তবে কিছু মানুষ আবার এই কাজটি অনায়াসে করে ফেলেন। তাদের একজন ছিলেন দিলদার। দীর্ঘ তিন দশক যিনি বাংলার সিনেমার দর্শকদের হাসানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে চাপিয়ে রেখেছিলেন। তার অভিনয় দেখে প্রাণ খুলে হাসেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
ভীষণরকম গোমড়ামুখো মানুষটিও পর্দায় দিলদারের কার্যকলাপ দেখে না হেসে পারতেন না। কৌতুক অভিনেতা হয়েও তার জনপ্রিয়তার ওজন ছিল প্রায় নায়কদের সমান।
আজ ১৩ জুলাই বাংলা সিনেমার এই হাসির রাজার চলে যাওয়ার দিন। ২০০৩ সালের এই দিনে তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। দেখতে দেখতে তার না থাকার ১৯ বছর কেটে হয়ে গেল।
দিলদার ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। এসএসসি পাশের পর পড়ার টেবিলের সঙ্গে সম্পর্কটা আর দীর্ঘ হয়নি তার।
দিলদার অভিনয় জগতে পা রাখেন ১৯৭২ সালে। সে বছর ‘কেন এমন হয়’ নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমায় নাম লেখান। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে। পর্দায় দর্শকদের হাসির যোগান দিতে দিতে একসময় তিনি হয়ে পড়েন বাংলা সিনেমার অপরিহার্য অংশ। তার জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে ‘দিলদার’ নামটি শুনলেই হাসি ফুটে উঠত দর্শকের ঠোঁটে।
দিলদারের জনপ্রিয়তার জোর এতটাই ছিল যে পর্দায় নায়কের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েও পেয়েছিলেন সাফল্যের দেখা। ‘আব্দুল্লাহ’ নামক একটি সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। সেই সিনেমা ব্যবসায়িকভাবে দারুণ সফল হয়েছিল। সিনেমার গানগুলোও পেয়েছিল ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন নূতন।
দীর্ঘ অভিনয়জীবনে অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন দিলদার। এরমধ্যে রয়েছে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’, ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘কন্যাদান’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘শুধু তুমি’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘অজান্তে’, ‘প্রিয়জন’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘নাচনেওয়ালী’সহ আরও অনেক জনপ্রিয় সিনেমা।
একজীবনে অভিনয়ের কারণে দিলদার দর্শকের ভালোবাসা অর্জনের পাশাপাশি পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। ২০০৩ সালে তিনি ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার অর্জন করেন।
দিলদারের মৃত্যুর পর অনেক কৌতুক অভিনেতা এসেছেন এদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে। কিন্তু দিলদার হয়ে উঠতে পারেননি কেউ। বাংলা চলচ্চিত্রে তার শুন্যস্থান আজও অপূরণীয় রয়ে গেছে।