‘২৪ বছর বয়সে মৌসুমীর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করি’

ছিলেন মঞ্চ অভিনেত্রী। মামুনুর রশীদের নাট্যদল আরণ্যকে অভিনয় করতেন। হুট করেই চলচ্চিত্রের অফার পেয়েই রাজি হয়ে যান। এরপর একে একে করেছেন ২২৩টি ছবি। কোনো ছবিতে মায়ের ভূমিকায়, কোনো ছবিতে ভাবি আবার কোনো ছবিতে বোনের ভূমিকায়। কখনো আলমগীরের স্ত্রী, কখনো রাজীবের স্ত্রী দেখা যেত শারমিন আক্তারকে।

খল অভিনেতা আহমেদ শরীফ ছিলেন পারিবারিক বন্ধু ও আত্মীয়। তাই বাসা যাওয়া আসা ছিল। একদিন আহমেদ শরীফ বললেন, ‘একটা ভালো ছবি হচ্ছে তুমি অভিনয় করতে পারো। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে হবে।’ আমি কোনোকিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলাম। ছবিতে অভিনয় করলাম। ছবি সুপার ডুপার হিট। ছবির নাম কেয়ামত থেকে কেয়ামত। মাত্র ২৪ বছর বয়সে মৌসুমীর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি, মা ও মেয়ের বয়স প্রায় এক -বলছিলেন শারমিন।

শারমিন আক্তারের বাবার বাড়ি চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ হলেও জন্ম ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় ইঞ্জিনিয়ার পাত্র আকতার হোসেনের সাথে। ১৫ বছর বয়সে কোলজুড়ে আসে মেয়ে। এরপর দুই ছেলে। বড় ছেলে সাকিব ইকবাল লিও থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। চার্টার্ড একাউন্টেড করে সেখানেই চাকরি করছেন। ছোট ছেলে শাহারুখ ইকবাল হৃদয় ইউল্যাবে বিবিএ করছেন। পাশাপাশি মায়ের প্রযোজনায় নাটকেও অভিনয় করেন হৃদয়।

শারমিন মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্রে এসেই মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করবেন এমনটা কাছের মানুষেরা ভাবেননি। শারমিন বলেন, মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করার জন্য কাছের অনেক মানুষ বকাবকি করেছে আমাকে। কিন্তু আমি সেসব গায়ে মাখিনি। আমি অভিনয় করতে চাই। যেকোনো ভূমিকায় আমি অভিনয় করতে পারবো। সবাই যদি নায়ক-নায়িকা হয় তাহলে অন্য চরিত্রগুলো কারা করবে? আমি অভিনয়কে প্রাধান্য দিয়েছি।

শারমিনকে কখনো অভিনয়ের জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়নি, না ঘরে না বাইরে। স্বামী আক্তার হোসেন কখনো আপত্তি করেননি। সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। চলচ্চিত্র জগতেও পেয়েছিলেন ভাইয়ের মতো একজনকে। শারমিন বলেন, আমি ফিল্মে রাজীব ভাইকে পেয়েছিলাম যিনি নিজের ছোটবোনের মতো করে আমাকে গাইডলান করতেন। তিনি ছিলেন আপন বড় ভাইয়ের মতো। আমার স্বামীর সাথে তাঁর ছিল সুসম্পর্ক। যার কারণে কখনোই আমাকে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়নি।

শারমিন কিছুদিন আগে পুরোপুরি গার্মেন্টস ব্যবসার ওপর ঝুঁকে ছিলেন। সাভারে নিজেদের ফ্যাক্টরি ছিল। বাংলা চলচ্চিত্র যখন অন্ধকার জগতে প্রবেশ করে, যখন অশ্লীলতার ছড়াছড়ি তখন নিজেকে সরিয়ে নেন তিনি। সেই অবসর সময়ে নিজেকে নিযুক্ত করেন কাপড় ব্যবসায়, খুব ভালোভাবেই ব্যবসা শুরু করেন। এরপরে নাটক ও টেলিফিল্ম প্রযোজনা শুরু করেন। এখন পর্যন্ত ২০ টি নাটক ৪টি টেলিফিল ও কয়েকটি ধারাবাহিক প্রযোজনা করেন। নিজের ছেলে হৃদয়কেও বানিয়েছেন নায়ক। হৃদয় বিদ্যা সিনহা মিম ও শিরিন শীলার বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন।

বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে মেঘ সরে স্বচ্ছ হয়ে উঠলে ফের ফেরেন ফিল্মি দুনিয়ায়। শুরু করেন অভিনয়। বাংলা চলচ্চিত্রে এখন রয়েছে অনেক সংকট। এই সংকট থেকে পরিত্রাণের কথাও বললেন শারমিন। তিনি বলেন, এখন অনেক প্রতিভাধর মুখ রয়েছে সেই মুখগুলোর যত্ন নিতে হবে। নির্মাণে আরো কৌশলী হতে হবে। ভালো গল্পের সিনেমা মানুষ দেখবেই, মানুষ হলমুখী হবে। সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দর্শকের অভাবে। দর্শক কিভাবে ফেরানো যায় সে বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। সিনেমা হাতের মুঠোয় চলে এসেছে বটে কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এখনো বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম চলচ্চিত্র।

শারমিন অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হলো- আমারে ঘর আমার বেহেস্ত, বাপের টাকা, প্রথম প্রেম, ভণ্ড, পালাবি কোথায়, হৃদয়ের বন্ধন, লাট সাহেবের মেয়ে, বিক্ষোভ, লজ্জা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *