‘উনি অপেশাদার প্রযোজক, শুটিংয়ে পানিটাও খেতে দেননি’

‘প্রযোজকের মধ্যে পেশাদারিত্বের কোনো ব্যাপার নেই। উনি একজন অপেশাদার প্রযোজক। তিনি এই সিনেমার শুটিং থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত অপেশাদার আচরণ করে গেছেন, শিল্পীদের সঙ্গে যথার্থ ব্যবহার করেননি, এমনকি শুটিং ইউনিটে শিল্পীদের খাবার নিয়েও কষ্ট দিয়েছেন তিনি। ’ সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘আশীর্বাদ’ ছবির কো প্রযোজক জেনিফারকে নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ছবিটির নায়ক জিয়াউর রোশান।

ছবিটি পরিচালনা করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। আগামী ১৯ আগস্ট মুক্তি পাবে ‘আশীর্বাদ’।। মুক্তি উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় হুট করেই রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনও অপেশাদার মনোভাব চোখে পড়ে প্রযোজকের। দেশের প্রথম সাড়ির গণমাধ্যমগুলোর কোনো সংবাদকর্মীও দেখা যায়নি সেখানে। দেখা যায়নি ছবিটির মূখ্য চরিত্রে অভিনয় করা নায়িকা মাহিয়া মাহি ও নায়ক রোশানকেও।

ওই সংবাদ সম্মেলনেই প্রযোজক জানান ফেসবুকে ছবিটির পোস্টার শেয়ার না করায় ছবির নায়ক-নায়িকাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। পাশাপাশি নায়ক-নায়িকাকে অনেকটা অপেশাদার বলেও মন্তব্য তার।

প্রযোজক জেনিফারের এমন মন্তব্যের বিপরীতে এবার পাল্টা মন্তব্য ছুড়লেন নায়ক জিয়াউল রোশান। তিনি বললেন, ‘একটা পোস্টার বানাতে হলে ফটোশুট করতে হয়, তাও যদি না হয় অন্তত যে পোস্টার বানানোর পর সেটা নিয়ে অভিনয়শিল্পীদের মতামত নেওয়া দরকার। লো কোয়ালিটির একটা পোস্টার বানিয়ে যদি আমাকে শেয়ার দিতে বলা হয় তাহলে তা মোটেও কাম্য নয়। ’

পোস্টার প্রসঙ্গে নায়ক নায়িকাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। নিজেদের মতো একটা নিম্ন মানের পোস্টার বানানো হয় যেটা সম্পর্কে রোশান নিজের অভিমত জানিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে রোশান বলেন, ‘আমাকে যখন পরিচালক মানিকভাই পোস্টার পাঠালেন তখন আমি আমার মতামত দিলাম এই বলে যে পোস্টারটা ভালো করতে। তিনি পরে জানাবেন বললেন। কিন্তু পরে জানাননি নিজেই ওটা আপলোড দিলেন উনারা। আমি সেই পোস্টার আপলোড দিইনি। ’

এই অভিনেতা বলেন, ‘সিনেমা মার্কেটিং-এর একটা পলিসি থাকে, সম্মিলিতভাবে আলোচনা করতে হয়। ফেসবুক বা হোয়াটসাপে গ্রুপ খুলতে পারতেন তারা। আমি জানি না কিছুই, আমাকে সাইকো সিনেমার প্রচারে গিয়ে সিনেমা হল মালিকের কাছে শুনতে হলো এই সিনেমা নাকি মুক্তি পাচ্ছে ১৯ আগস্ট। এমন বিশৃঙ্খলভাবে একটা সিনেমার প্রচার হয় কিভাবে?’

জেনিফারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে রোশান বলেন, ‘এটা ৬০ লাখ টাকার অনুদানের ছবি। আমি জানি না আসলে সম্পূর্ণ টাকা দিয়ে সিনেমা বানানো হয়েছে কি না। না হলে এতো কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করে কেন সিনেমা বানানো হলো। শুটিং ইউনিটে কখনো খাবারের সমস্যা হবার কথা না। অথচ উনি খাবারের সমস্যা করলেন। খাবার পানি পর্যন্ত নিজের ঘরে তালাবন্ধ করে রাখতেন। আমাদের খাবারের ও পানির সমস্যায় পড়তে হয়েছে অনেকবার। টাকা বাচাতে উনি নিজেই বাজার করতে যেতেন। ’

প্রযোজক জেনিফারের কর্মকাণ্ডে বিরক্তি প্রকাশ করে রোশান বলেন, ‘প্রযোজক জেনিফার শুটিংয়ে হস্তক্ষেপ করতেন। প্রতিটি সিন শেষ হতেই উনি এসে সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড দেন। এভাবে সিন বাই সিন যদি ফেসবুকে দেওয়া হয় তাহলে কিভাবে শুটিং করবো? এসব বিরক্তির মাঝেও উনার আবদার আমরা যে ছবি ফেসবুকে আপলোড দিব তাতে যেন প্রযোজক জেনিফারকেও থাকতে হবে; লিখে দিতে হবে প্রযোজকের নাম। এসব অব্যবস্থাপনা নিয়ে খুবই বিরক্ত ছিলাম। তারপরেও ভেবেছিলাম প্রচারে অংশ নিব। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন করে প্রচুর মিথ্যা কথা বললেন। এসব খারাপ লাগছে। ’

রাজধানীর মগবাজারের মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে, প্রযোজক জেনিফার বলেন, ‘আশীর্বাদ সিনেমায় তারা অভিনয় করেছে অথচ ছবির পোস্টার তারা ফেসবুকে শেয়ার দেয়নি। কেন যে শেয়ার দিচ্ছে না বুঝতে পারছি না! যেহেতু তারা শেয়ার করেনি। মনে হয়েছে আমাদের ছবির পার্ট হিসেবে তারা খুশি নন। ’

সেজন্য আমি, আমার পরিচালক তাদের ফোন করে জানাইনি এ সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে। আজকে ব্যতিক্রম প্রচারণার মাধ্যমে ছবির এই সংবাদ সম্মেলন করলাম নায়ক-নায়িকা ছাড়া। আক্ষেপ নিয়ে তাহেরা ফেরদৌস জেনিফার বলেন, ‘নায়ক-নায়িকাদের আজকাল এতো ডিমান্ড যে প্রযোজক-পরিচালকরা হিমশিম খেয়ে যাই। ’

২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ছবি আশীর্বাদ। ছবিটি জেনিফারের কাহিনি ও চিত্রনাট্য। সংলাপ লিখেছেন আব্দুল্লাহ জহির বাবু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *