পদ্মা সেতু তৈরির বালি দিয়ে বানানো যেত ৫৭টি বুর্জ খলিফা

উদ্বোধন হয়েছে পদ্মা সেতুর। সেতুটি উদ্ধোধন করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতু নিয়ে বিশ্বজুড়ে চর্চা চলছে। এই সেতু তৈরির জন্য প্রায় ৬৫ লাখ ঘনমিটার বালি ব্যবহার করা হয়েছে। এই বালি দিয়ে ১৯ কোটি ১২ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করা যাবে যা ৫৭টি বুর্জ খলিফার সমান।

এখন বিশ্বের অন্যতম উঁচু স্থাপত্য বললেই প্রথমেই মাথায় আসে বুর্জ খলিফার নাম। কিন্তু বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর মোট যা উচ্চতা তা ৫৭টি বুর্জ খলিফার সমান! পদ্মা সেতু এমন করে করা হয়েছে যাতে তা ভূমিকম্প সহ্য করতে পারে। মূল সেতু ৬.১৫ কিলোমিটার লম্বা। দুধারে , রাস্তা মিলিয়ে মোট দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার । দোতলা এই সেতুর নিচের তলা দিয়ে আগামীদিনে ট্রেন চলবে।

একতলায় করা হয়েছে সড়কপথ। সেতুর নকশা এমন করে করা হয়েছে যাতে অতিরিক্ত ভার নিতে পারে। পদ্মা নদী খরস্রোতা। এই এলাকা ভূমিকম্পপ্রবণ। তাই সেতু করা হয়েছে কিছুটা বাঁকা। বিশেষজ্ঞরা জানান, স্রোতে পদ্মানদীর তলদেশে সেতুর পিলারের কাছে ৬২ মিটার পর্যন্ত মাটি সরে যেতে পারে

তাই এই সেতুকে টিকিয়ে রাখতে হলে ভিত মজবুত হওয়া জরুরি। হিসাব করেই সেখানে পাইলিং এবং পিলার বসানো হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে ২৬২টি ইস্পাত বা স্টিল ও ৩২টি রডের পাইল । ওই পাইলগুলি নদীর জলের নিচে ১২৫.৫ মিটার বা ৪১১.৫০ ফুট গভীর পর্যন্ত আছে । তাঁদের হিসাবে, পদ্মাসেতুতে যত পাইল বসানো হয়েছে, সব মিলিয়ে সেগুলির মোট উচ্চতা হবে প্রায় ৩৫ হাজার ২৮০ মিটার। যা মাউন্ট এভারেস্টের চারগুণেরও বেশি।

ওই সেতুর নির্মাণে প্রায় ২ কোটি ১৭ লাখ জিও ব্যাগ ব্যবহার হয়েছে। এর কোনওটির ওজন ৮০০ কেজি। জিও ব্যাগে বালি ভরে ফেলা হয়েছে নদীর তলদেশে । পাথর ফেলা হয়েছে প্রায় সোয়া ১০ লাখ ঘনমিটার। এই পরিমাণ পাথরকে ১৩ হাজার বর্গফুট জুড়ে স্তূপ করে রাখলে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত কেওক্রাডংয়ের থেকেও উঁচু দেখাবে।

আধিকারিক এবং বিশেষজ্ঞরা জানান, সেখানে সেতু জন্য কাজ করতে বালি ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় ৬৫ লাখ ঘনমিটার। এই বালি দিয়ে ১৯ কোটি ১২ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের ভবন তৈরি করা যাবে। যা প্রায় ৫৭টি বুর্জ খলিফার সমান। উল্লেখ্য, বিশ্বের অন্যতম উঁচু ভবন দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার সবতলা মিলিয়ে আয়তন ৩৩ লাখ ৩১ হাজার বর্গফুট।

পদ্মা সেতু এবং সংযোগকারী রাস্তা নির্মাণে ব্যবহার হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার টন রড। এই রড যদি লম্বালম্বি রাখা হয়, তাহলে ব্যবহৃত রডের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ১ হাজার ২৯৬ কিলোমিটার। যা বাংলাদেশে সব চেয়ে উত্তরের তেঁতুলিয়া থেকে দক্ষিণের আরেক প্রান্ত টেকনাফের দূরত্বের চেয়েও বেশি। আগামী ১০০ বছরে এই সেতুর কোনরকম ক্ষতি হবে না, সেই হিসাব করেই সেতুর নকশা এবং পরিকাঠামো করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *